উজ্জ্বল কুমার সরকার নওগাঁঃ প্রতিনিধিঃ
নওগাঁ জেলা ১১টি উপজেলায় বাঁশ শিল্প ছিল বাঙালি জাতির সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। বাড়ির পাশে বাঁশঝাড় বেত বনের ঐতিহ্য ছিল গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির রূপ। এক সময় বাংলার ঘরে ঘরে তৈরি হতো বাঁশ ও বেতের পণ্য। অনেকে পরিবার আবার এই শিল্প পণ্য তৈরি করে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। গ্রাম বাংলার অনেক দরিদ্র পরিবারের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ছিলো এই শিল্প। কিন্তু বর্তমানে জনজীবন থেকে সেইসব হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শিল্প। এখনসেই শিল্পের জায়গায় দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক পণ্য। তাই বলা যেতে পারে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকতে না পেরে শিল্পের ঠিকানা এখন প্রায় জাদুঘরে। এক সময় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার ১০ নং ভীমপুর ইউনিয়নের বেলঘুড়ীয়া ঋষি পাড়া, ও খোদ্দনারায়নপুর ঋষি পাড়া মান্দা উপজেলা সুতিহাট ঋষি পাড়া ৯ নং চেরাগপুর ইউনিয়ন চেরাগপুর গ্রমের এবং মাতাজীহাট এলাকা পল্লিতে বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, চাঙারি, টুকরি, চালনি, খলই, পলই, ঝুড়ি, খাচি, গুমাইসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হতো। এ সকল পণ্য তৈরিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কাজে সামিল হতো। হাট বাজারের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফেরি করে ফেরিওয়ালারা এসব বেত ও বাঁশ শিল্প তৈরি পণ্য বিক্রিয় করত। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ শিল্পের মূল উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিতে বাঁশ ও বেতের সামগ্রীর ব্যয়ও বেশি হচ্ছে। যার কারণে এই শিল্পে কারিগররা তাদের পেশা ধরে রাখতে পারছে না, ফলে বেকার হয়ে পড়েছে কারিগরেরা। অনেকে আবার এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়। এক সময় আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় বাঁশ ঝার দেখা গেলেও এখন আর বাঁশ ঝার চোখে পড়ে না। সরিজমিনে গিয়ে নওগাঁর আত্রাইয়ের কাসুন্দা, কুলা,কাসোপাড়া, সিংসাড়া,বজ্রপুর বাসিন্দাদের কাছে থেকে জানা গেছে, এই এলাকায় এক সময় বিভিন্ন জাতে বাঁশ জন্মাতো। এবং বাঁশ দিয়েই হরেক রকমের জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা। শাহাগোলা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের বাঁশ শিল্প কারিগর মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, বেত ও বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র এখন আর আগের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে না। কারণ বর্তমানে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পণ্যের উপর ঝুঁকছে লোকজন। এ শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। বাঁশবেত পণ্যের পাইকারি ক্রেতা আরমান বলেন, এক সময় প্রত্যেক বাড়িতেই বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিস পত্রের ব্যবহার ছিল, চাহিদাও ছিল প্রচুর। বর্তমান প্লাস্টিক পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মুখ থুবরে পড়ছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের বাঁশ শিল্পের কারিগর সেকেন্দ, জবেদ, তফা মুসলেম বলেন, কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়ায় আমরা এখন অনেক কষ্টে দিন পারি দিচ্ছি। আমাদের কেউ কখনো খবর নিতেও আসে না। আহ্সানগঞ্জ হাটে বাঁশ ও বেত শিল্পের তৈরি পণ্য বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ী ভবেশ চন্দ্র বলেন, সৌখিন মানুষ ঘরে বাঙালির ঐতিহ্য প্রদর্শনের জন্য বাঁশ বেতের তৈরি কিছু সামগ্রী বেশি দাম দিয়ে কিনলেও মূলত ব্যবহারকারীরা বেশি দাম দিতে চায়না। যার ফলে এই শিল্পের তৈরি পণ্য এখন প্রায় বিলুপ্ত। প্রকৃতপক্ষে বাঁশ ও বেতের সামগ্রী যারা তৈরি করছে তাদেরকে সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও’র সহায়তা করা অত্যন্ত জরুরি।