ঝালকাটি সংবাদ দাতাঃ ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান ১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দগ্ধ ও নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। তবে এখন পর্যন্ত হতাহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। লঞ্চের কেবিন গুলোতে অনেক মৃত্যু যাত্রীদের হাড় ও মাথার খুলি দেখা গেছে। এদিকে স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে সুগন্ধা নদীর তীর।
শুক্রবার (২৪ডিসেম্বর) রাত ৩টার দিকে সুগন্ধা নদীর পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকুল নামক এলাকায় ঢাকা থেকে বরগুনাগামী লঞ্চটিতে আগুন লাগে। লঞ্চটির ইঞ্জিন কক্ষ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
খবর পেয়ে বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠির কোস্ট গার্ডসহ ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট উদ্ধার কাজ করছেন। দগ্ধদের মধ্যে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে শতাধিক ও ৭২ জনকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত আহত ও নিখোঁজ সংখ্যা পাওয়া যায়নি। শুক্রবার (২৪ডিসেম্বর) বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক কামাল হোসেন ভূঁইয়া এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিতকরেছেন।
খবর পেয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিকাল ৩টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতি নিহত পরিবারকে দেড় লাখ টাকা ও দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন এবং দগ্ধদের চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার সরকার বহন করবে বলে প্রতিমন্ত্রী ঘোষণা দেন। এছাড়াও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে আরো জানান তিনি।
এদিকে জেলা প্রশাসক মোঃ জোহর আলী জানায়, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্তটিম গঠন করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত লাশ স্বজনদের শনাক্তের জন্য পৌর মিনি পার্কে রাখার পর এ পর্যন্ত ৬ জনকে শনাক্ত করেছে।
জানা গেছে, লঞ্চটি ঢাকা থেকে বরগুনা যাচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, লঞ্চটিতে হাজার খানেক যাত্রী ছিলেন। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় লঞ্চটিতে আগুন লাগে। পরে পার্শ্ববর্তী দিয়াকুল এলাকায় ভেড়ানো হয়।
লঞ্চের একাধিক যাত্রী জানান, রাত ৩টার দিকে লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে হঠাৎ আগুন লেগে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো লঞ্চে। এ সময় লঞ্চে বেশ কয়েক জন যাত্রী দগ্ধ হন। প্রাণে বাঁচতে অনেক যাত্রীই নদীতে ঝাঁপ দেন।
সাইদুর নামের এক যাত্রী জানান, ‘রাতে ঢাকা থেকে বরগুনা ফিরছিলাম। লঞ্চটি ঝালকাঠি গাবখান এলাকায় পৌঁছালে ইঞ্জিন রুমে আগুন লেগে যায়। এরপর সে আগুন পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। অসংখ্য মানুষ দগ্ধ হয়। প্রাণে বাঁচতে নদীতে ঝাপ দেন অনেক যাত্রী।’
নদীপাড়ে অপেক্ষায় থাকা আমেনা খাতুন জানান, ‘তার ভাই ঢাকা থেকে এ লঞ্চে করে রওনা দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমার ভাইয়ের সন্ধান চাই।’
এদিকে চলন্ত লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর তীর। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে নদী তীরের গাবখান ধানসিঁড়ি এলাকায় অগ্নিদগ্ধদের স্বজনরা ভীড় করেন।
লঞ্চটিকে বর্তমানে ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউড়ি সাইক্লোন শেল্টারের পাশে (বিষখালী নদীর তীরে) নোঙর করা হয়েছে